মানুষের অনেক বিলাসিতা থাকে। অনেক মানুষেরই ভ্রমন বিলাসি মেজাজ থাকে। টাকা থাকুক আর নাই বা থাকুক তারা ভ্রমন করেই মজা নেয়। এরকম বিলাসিতা অনেক বিষয়েরই আছে। গান, বাজনা, খেলা এসব নেশা হিসেবে নেয় অনেকেই। বই বিলাসি মানুষের জন্য কম সুখবর নয়, প্রচুর মানুষ বিলাসিতা হিসেবে বই পড়েন। আভিজাত্য প্রকাশের সুযোগেও অনেকে বইয়ের আশ্রয় নেন। সামাজিক অবস্থান থেকে এর বিস্তৃতি আছে অনেক দূর পর্যন্ত। বিলাসিতা নাকি মৌলিক চাহিদা, বই পড়া কোন অবস্থানে আছে বাংলাদেশে? জানার চেষ্টা করা যাক।
আমাদের মৌলিক চাহিদা তালিকা দেখে আসি।
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন। এ কয়েকটি মৌলিক চাহিদা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলো অনেক দিন আগেই। আরো কয়েকটি বিষয় চিন্তা করা যায় বৈ কি। তার জন্য জীবন মানের দিকেও চিন্তা করা দরকার। ধীরে ধীরে যখন বাংলাদেশীরা মধ্য আয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ হিসেবে ইন্টারনেট এবং টেলিফোন/মোবাইল ফোনও মৌলিক চাহিদা তালিকায় আসার কথা। স্বীকৃত না হলেও এ দু’টি আজকাল মৌলিক চাহিদার মধ্যেই। প্রতিফলন দেখলে বোঝা যায়, ভিক্ষুকের সেল ফোন ব্যবহারের প্রসঙ্গ। সহজলভ্য না হওয়ায় ইন্টারনেট এখনো সবার হাতে যায় নি। অথচ চাহিদাটা মৌলিক পর্যায়ের। তথ্য জানা, বুঝতে পারা, ছাত্রছাত্রী শিক্ষক, সাধারন পথচারী, কিংবা নিম্ন আয়ের মানুষেরও ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টি আবশ্যিকতায় পরিপূর্ন।
আবেদন করা, বিজ্ঞপ্তি পাওয়া, অথবা যে কোন কর্পোরেটের সাথে যুক্ত হতে গেলেই লাগছে ইন্টারনেট, সেল ফোন, ফোন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া। এসব সময়ের সাথে, জীবনের সাথে প্রাসংগিক হয়ে গেছে। অপ্রাসংগিক মনে করা হতো অনেক দিন আগে। আরো আগের সময়ে চিন্তা করা হতো সেল ফোন কেন? এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মানুষের মনে নানান বিরক্তি ছিলো। আজ সব কিছুরই অবসান।
জীবন মানের দিকে তাকাই, বিলাসিতা নাকি মৌলিক চাহিদা, বই পড়া কোন অবস্থানে
এক বেলা ভাত খাবার জন্য এক সময় অনেকেই ভিক্ষা করত। এখনো হয়ত কেউ কেউ করে। সমাজে এই পরিস্থিতি হয়ত থাকতে হবে। একথা সত্যি যে এখন কেউ স্বাভাবিক ভিক্ষা করে একটু উন্নত জীবনের জন্য। অল্প কষ্টে বেশি লাভের আশায়। অনেক আগেও যখন কাজের লোকের অভাব ছিলো না সেখানে হাজারো মানুষ পাবেন যারা কাজের লোক খুঁজে পাচ্ছেন না। নিজের পরিবারের কাজ নিজেকেই সামলাতে হচ্ছে।
জীবন মান বদলাবেই। সময়ে পরিস্থিতিতে মানুষের চারপাশে ইলেক্ট্রনিক্স বিপ্লব ধেয়ে ছুটেছে ভিন্ন গতিতে। তার সাথে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পালটে যাচ্ছে যার যার মত করে। বিলাসিতার চেষ্টা সবারই আছে, ছিলো থাকবেই। যে কোন মানে জীবন কাটানোর পরেও স্বপ্ন থাকে বিলাসি চাদরে জীবন মুড়ে ঘুরে ফিরে চলতে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সাধারন শ্রেনীতেই এখন বিলাসিতার দারুণ ছাপ। বাড়ি গাড়ি, শিল্প কারখানা, ব্যবসা, সঞ্চয়, ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, ট্যাবলেট, সেলফোন, বড় পর্দায় হোম থিয়েটার এসি সহ নানান উপকরন জায়গা পাচ্ছে।
অনেকের ঘরেই এক কোনে একটি বুকশেলফ আছে। সেখানে বিখ্যাত সব বইয়ের সংগ্রহ। বিলাসিতা, আভিজাত্য প্রকাশের তাগিদে সেগুলোও শোভা পায়। অনেকেই অবসরে কয়েক পৃষ্ঠা ওল্টান। অনেকেই তার প্রয়োজনীয়তা মনে করেন না। বিলাসিতার উপকরনে এমন হয় হরহামেশাই। এক্ষেত্রে বিলাসিতা নাকি মৌলিক চাহিদা, বই পড়া হয়ে ওঠে না আলাপের বিষয়।
বই পড়া বাংলাদেশীদের মৌলিক চাহিদা হতে পারে?
বাংলাদেশের বয়স অনেক কম। সত্তুর বছরের আগে যেমন মানব জীবন বুঝতে পারে না তার আরো কী কী করা উচিৎ ছিলো সেখানে বাংলাদেশীদের এত তাড়াহুড়ো করে বুঝতে পারার কথা নয়। অল্প কিছু সংখ্যক মানুষের জন্য মৌলিক চাহিদা হয়েই চলছে বই পড়া। যারা পড়েন তারা পড়েন খাবারের সমান মর্যাদা দিয়ে। সকাল বেলা না খেলেও চলে, কিন্তু দুপুর বেলা না খেয়ে একজন মানুষ স্বাভাবিক থাকে? বই না পড়লে অনেকেরই এমন হয়। এ মাসে কোন বই না পড়ে থাকলেও পরের মাসে ঠিকই বই পড়েন। এই গোষ্ঠী সংখ্যা অনেক ছোট। এজন্য বাংলাদেশের বইপড়া ইন্ডাষ্ট্রি খুব বেশি পরিসরে বিস্তৃত নয়।
হলিউড মুভির কথা অনেকেই জানেন। হলিউড মুভি বানানোর আগে ইংরেজি সাহিত্যের গল্প গুলোর দিকেই তাকান প্রযোজক আর পরিচালকগন। জনপ্রিয় গল্প নিয়ে সিনেমা বানিয়ে তাক লাগিয়ে দেয় তারা। সেখান থেকে কপি হতে দেখি ভলিউড প্রাংগন। খুবই দুঃখ হয় যখন সেই ভলিউডকেও নকল করে আমাদের ঢাকাইয়া চলচ্ছিত্র। ব্যতিক্রমের কথা আলোচনা করতে আসি নি। কথা বলছি স্বাভাবিক দৃশ্যপট নিয়ে।
কোথাও যদি বাংলাদেশের বই পড়া প্রাধান্যই না পাবে তবে একে নিয়ে আলোচনা কে করবে? মৌলিক চাহিদা তখন আর বই পড়া হবে না। হবে ফেইসবুক চালনা। আমরা অনেকেই ফেইসবুক চালাই। ব্যবহার করি না। অনেক মানুষকেই দেখি ফেইসবুক চালায়। তাদের নিজের চালিকা শক্তি ফেইসবুক আয়ত্ব করে নিয়েছে।
সম্ভাবনাময় একটা ব্যপার নজরে পড়েছে। ফেইসবুকই হোক আর অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াই হোক, ব্লগিং করুন আর যা ই করুন। অনেক প্রতিভা দেখা গেছে সাধারন মানুষের ভীড়ে। লিখতে চেষ্টা করছেন অনেকেই। দারুন সব ভাবনা নিয়ে লিখে চলেছেন সভ্যতার এক নতুন গোষ্ঠী। সাধুবাদ তাদের। হয়ত ভাবেন নি- বিলাসিতা নাকি মৌলিক চাহিদা, বই পড়া।
এক সময় হবে, বই পড়া হবে মানুষের মৌলিক চাহিদা। যখন জ্ঞান শুন্যতায় ভুগবে নিজের আত্মা। ভেতরের চাহিদা বাইরের চাহিদাকে হারিয়ে দিতে কতক্ষণ? বিলাসিতা নাকি মৌলিক চাহিদা, বই পড়া আপনি কিভাবে দেখছেন? জানাতে পারেন।